বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ২০টি গান
এস মাহবুব

উপরে (বা থেকে): ফেরদৌসী রহমান, সুরকার আলম
খান, আব্দুল জব্বার ও রুনা লায়লা
মাঝে (বা থেকে): গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার আলাউদ্দীন আলী,
মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমীন
নিচে (বা থেকে): সৈয়দ আব্দুল হাদী, আবিদা সুলতানা, এন্ড্রু কিশোর ও
সামিনা চৌধুরী
০১.
পিচঢালা এ পথটারে ভালোবেসেছি
- আব্দুল জব্বার, ছবি: পিচঢালা পথ, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার,
সুরকার: রবীন ঘোষ।
০২.
আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল
- আঞ্জুমান আরা বেগম, ছবি: আয়না ও অবশিষ্ট, গীতিকার: গাজী মাজহারুল
আনোয়ার, সুরকার: সত্য সাহা। গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর প্রথম লেখা গান
সম্পর্কে জানান, “তখন আমি রেডিওতে নিয়মিত গান লিখছি। একদিন সত্য সাহা
আমাকে নিয়ে গেলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্তের বাড়িতে। তাঁর আয়না ও
অবশিষ্ট ছবিতে একটি গান লাগবে। দত্ত বাবু আমাকে বললেন, ‘একটি কাব্যময়
গান চাই। আপনার নিজের মতো করে লিখে দেন।’ তখন আমি ওখানে বসেই ১০ মিনিটে
‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি লিখি। তিনি গানটি পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই
বললেন, ‘আমি এমন কথাই খুঁজছিলাম’।”
০৩. আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে -
মাহমুদুন্নবী ও
আবিদা সুলতানা, ছবি:
আলো তুমি আলেয়া, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার: সুবল দাস।
আবিদা সুলতানা জানান, “১৯৭৪-৭৫ সাল হবে। আমরা তখন মতিঝিল কলোনিতে থাকি।
সকালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব বলে আমাদের পরিবারের সবাই গাড়িতে উঠব,
ঠিক ওই সময় বাড়িতে ফোন এল। আলী হাসান খান সাহেব ফোনে আব্বাকে জানালেন,
একটি ছবির গান আছে এফডিসিতে। শিখাকে দিয়ে (আমার ডাকনাম) গানটি করাতে
চাই। বিয়ে বাদ দিয়ে গান গাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। তাই আমি কান্নাকাটি
শুরু করে দিলাম। তখন আম্মা আমাকে অনেক বোঝালেন যে সুযোগ সব সময় আসে না।
এরপর আব্বার সঙ্গে আমি এফডিসিতে যাই। গিয়ে দেখি, মাহমুদুন্নবী গানটি
তখন গেয়ে ফেলেছেন। এত বড় শিল্পী, আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। মনে আছে,
গানটির মিউজিক ট্র্যাক পাকিস্তান থেকে করিয়ে আনা হয়েছিল। ওই প্রথম আমি
মিউজিক ট্র্যাকের ওপর গান গাই।”
০৪. চোখ যে মনের কথা বলে - খন্দকার নূরুল আলম, ছবি:
যে আগুনে পুড়ি, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার: খন্দকার নূরুল
আলম।
গানটি ইউটিউবে দেখুন শিল্পী
রাজীব’এর কন্ঠে
০৫. গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে -
মাহমুদুন্নবী ও
রুনা লায়লা, ছবি:
স্বরলিপি, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার: সুবল দাস। রুনা
লায়লা জানান, “এটাই বাংলা চলচ্চিত্রে আমার গাওয়া প্রথম গান। ১৯৬৩-৬৪
সাল হবে। আমি তখন পাকিস্তানে। ওখানকার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের ব্যস্ত
শিল্পী। প্রতিদিনই দুই-তিনটা প্লেব্যাক করছি। ওই সময় আমার সঙ্গে
যোগাযোগ করেন গানটির সুরকার সুবল দাস (প্রয়াত) এবং নজরুল ইসলাম। জানান,
তাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। আমাকে দিয়ে স্বরলিপি ছবির একটি গান করাতে
চান। আমি সম্মতি দিই। যেদিন গানটি ধারণ করা হবে সেদিন উর্দু ছবির দুটো
গানের রেকর্ডিং ছিল। তাই উনাদের জানালাম, আসতে একটু দেরি হবে। মনে আছে,
লাহোরের বারী স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড হয়েছিল। আমি গিয়ে দেখি, গাজী
মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ওই গানটি শিল্পী মাহমুদুন্নবী (প্রয়াত) গাইছেন।
তাঁর গাওয়া শেষ হলে পরে আমি কণ্ঠ দিই।”
০৬.
নীল আকাশের নীচে আমি -
খন্দকার ফারুক আহমেদ, ছবি: নীল আকাশের নীচে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল
আনোয়ার, সুরকার: সত্য সাহা।
০৭.
চোখের নজর এমনি কইরা -
সৈয়দ আব্দুল হাদী, ছবি: ফকির মজনু শাহ, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার,
সুরকার: আলাউদ্দিন আলী।
০৮.
আছেন আমার মোক্তার -
সৈয়দ আব্দুল হাদী, ছবি: গোলাপী এখন ট্রেনে, গীতিকার: গাজী মাজহারুল
আনোয়ার, সুরকার: আলাউদ্দিন আলী।
০৯. কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু - ফেরদৌসী রহমান, ছবি:
মধুমিলন, গীতিকার: শহীদুল ইসলাম, সুরকার: বশীর আহমেদ।
গানটি শুনুন ফেরদৌস আরা’র কন্ঠে
। ফেরদৌসী রহমান জানান, “গানটি বেশ কঠিন ছিল। গাইতে বেশ লম্বা দমের
প্রয়োজন হয়। আমি লোকগান গাই বলে ৫৫ সেকেন্ড পর্যন্ত দম নিয়ে গাইতে
পারতাম। সত্তর দশকের শুরুর দিকে সম্ভবত। এফডিসিতে যেদিন গানটি রেকর্ড
হওয়ার কথা, সেদিন সব আয়োজন সম্পন্ন হলেও রেকর্ড হলো না। আমার
সংগীত-জীবনে তখন পর্যন্ত এ রকম ঘটনা ঘটেনি বলে একটু মন খারাপ হয়েছিল।
এর তিন-চার দিন পর বশীর আহমেদ রেকর্ডিংয়ের নতুন তারিখ জানালেন। কীভাবে
যেন ওই দিন গানটি ‘ওকে’ হয়ে গেল।”
১০.
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
- সাবিনা ইয়াসমীন, ছবি: অশ্রু দিয়ে লেখা, গীতিকার: ড. মোহাম্মদ
মনিরুজ্জামান, সুরকার: আলী হোসেন।
১১.
তুমি কি দেখেছ কভু -
আব্দুল জব্বার, ছবি: এতটুকু আশা, গীতিকার: ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান,
সুরকার: সত্য সাহা।
আব্দুল জব্বার জানান, “গানটি এফডিসিতে রেকর্ডিং হয়েছিল। ছবিটি মুক্তি
পাওয়ার পর শুনি, গানটি নিয়ে নাকি তোলপাড় হয়ে গেছে। গানটি পর্দায় আলতাফ
(প্রয়াত) যখন গেয়ে ওঠেন, তখন দর্শকের তালিতে প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ে।”
১২.
এই পৃথিবীর পান্থশালায়
- সৈয়দ আব্দুল হাদী, ছবি: যোগবিয়োগ, গীতিকার: ড. আবু হেনা মোস্তফা
কামাল, সুরকার: সুবল দাস। সৈয়দ আব্দুল হাদী জানান, “গানটি ১৯৬৩-৬৪ সালে
করা। গানটি লেখা, সুর করা - সবই আমার বাড়িতে বসে হয়েছিল।”
১৩. একবার যদি কেউ ভালোবাসত -
সৈয়দ আব্দুল হাদী ও
সামিনা চৌধুরী, ছবি:
জন্ম থেকে জ্বলছি, গীতিকার: আমজাদ হোসেন, সুরকার: আলাউদ্দিন আলী।
সামিনা চৌধুরীর বলেন, “আমি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। আমাকে দিয়ে প্রথম
আলাউদ্দিন চাচা বাচ্চাকণ্ঠে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ গানটি গাওয়ান। এর দুই
মাস পর চাচা একদিন বাসায় এসে হাজির। আম্মাকে ডেকে বললেন, ‘ভাবি, আপনার
মেয়েকে দিয়ে বাচ্চাদের গান হবে না।’ আম্মা তো অবাক। শুনে বললেন, তাহলে
কি ওকে দিয়ে গান হবে না? চাচা বললেন, ‘হবে, তবে বড়দের গান। তাই ওকে
নিয়ে যেতে এসেছি।’ চাচা আমাকে শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে নিয়ে গেলেন
এবং ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’ গানটি গাওয়ান। যে গানটি ছবিতে ঠোঁট মেলান
ববিতা।”
১৪. কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না -
সৈয়দ আব্দুল হাদী ও
সাবিনা ইয়াসমীন, ছবি:
সুন্দরী, গীতিকার: আমজাদ হোসেন, সুরকার: আলাউদ্দিন আলী।
১৫.
হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস
- এন্ড্রু কিশোর, ছবি: বড় ভালো লোক ছিল, গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক,
সুরকার: আলম খান।
১৬.
চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার
তুলনা - রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোর, ছবি: আশীর্বাদ,
গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হক, সুরকার: আলম খান। গানটি সৈয়দ শামসুল হক তাঁর
পুত্রের অনুরোধে লিখেছিলেন।
১৭.
ওরে নীল দরিয়া - আব্দুল
জব্বার, ছবি: সারেং বউ, গীতিকার: মুকুল চৌধুরী, সুরকার: আলম খান। আলম
খান জানান, “গানটির অস্থায়ী সুরটা আমি করি ১৯৬৯ সালে। ওই সময় আমি ভীষণ
অসুস্থ ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে সুরটা মাথায় আসে। দীর্ঘদিন আমি সুরটি রেখে
দিই। এরপর ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে আবদুল্লাহ আল-মামুন (প্রয়াত) এলেন তাঁর
সারেং বউ ছবিটি নিয়ে। সারেং বাড়ি ফিরছে - এ রকম একটি সিকোয়েন্স তিনি
আমাকে শোনান। ওইখানে দেখা যাবে, সারেং গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছেন। আর
তাঁর স্ত্রী সেটি স্বপ্নে দেখছে। তখন আমি গানটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে
রাখা ওই সুরটি গীতিকার মুকুল চৌধুরীকে (প্রয়াত) শোনাই। তিনি তখন সুরের
ওপর ‘ওরে নীল দরিয়া’ পুরো মুখটি লিখে দেন। অন্তরাগুলো তিনি পরে গল্প
অনুযায়ী লেখেন। আমি তাঁর কথার ওপরই সুর করি। গানটি কাকে দিয়ে গাওয়ানো
যায়, যখন ভাবছিলাম, তখন আবদুল্লাহ আল-মামুনই আব্দুল জব্বারের কথা বলেন।
গানটি কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে রেকর্ডিং হয়েছিল।”
১৮.
কী যাদু করিলা - সাবিনা
ইয়াসমীন ও এন্ড্রু কিশোর, ছবি: প্রাণ সজনী, গীতিকার: মনিরুজ্জামান
মনির, সুরকার: আলম খান।
১৯.
তুমি যেখানে আমি সেখানে
- এন্ড্রু কিশোর, ছবি: নাগপূর্ণিমা, গীতিকার: মনিরুজ্জামান মনির,
সুরকার: আলম খান। এন্ড্রু কিশোর জানান, গানটির সুর এত চড়া ছিল যে অনেক
কষ্টে গানটি গাওয়ার পর এক সপ্তাহ তিনি অন্য কারও গান গাইতে পারেননি।
২০.
চুমকি চলেছে একা পথে -
মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ছবি: দোস্ত দুশমন, গীতিকার: দেওয়ান নজরুল,
সুরকার: আলম খান।
|